Dr. Syama Prasad Mookerjee Research Foundation

স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুর্শিদাবাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী

এ দেশে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন হাজার হাজার বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী পরাধীন ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্ত করবার জন্য ব্রিটিশ শাসকের নির্মম নির্যাতন যথা থানার লক-আপে অত্যাচার, জেল, প্রহার, দ্বীপান্তর ইত্যাদি সহ্য করে ও নিজেদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে স্বদেশী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই বীরদের মধ্যে নারীদেরও একটা গৌরবময় ভূমিকা ছিল। উল্লেখ করা যেতে পারে অনেক নাম। কলকাতার অরুণা দাসগুপ্ত, আভা দে, সরযুবালা সেন, কুমুদিনী দাসী, কৃষ্ণা মিত্র, প্রভাবতী দেবী, শৈলবালা ঘােষ প্রমুখ স্মরণীয়। ২৪- পরগণার শিবকালী দেবী, অমলাদেবী, মাতঙ্গনী করণ, হুগলীর বিনয়বালা দেবী, আতরবালা দাসী,চারু দাসী, বীণাপানি দে, কুমুদিনী দাসী, হাওড়া জেলার সুশীলা দেবী, হীরা দেবী, লক্ষ্মী বাই,কমলিনী সরকার প্রমুখ স্মরণীয় হয়ে আছেন। গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হবে বর্ধমান জেলার জ্ঞানপ্রভা দেবী, নির্মলবালা সান্যাল, সুষমা দেবী, মঞ্জুরানী ঘােষ, দুর্গারানী দেবী, বাঁকুড়া জেলার বসন্তকুমারী দেবী, সরােজিনী বাগচী, চারুবালা দাসী, ইন্দুমতী ঘােষ, সুহাসিনী দাসী, নদীয়ার বিভারানী দাসী, সুপ্রীতি মজুমদার, অর্পনা অধিকারী, সাবিত্রী দেবী, লীলাবতী দেবী, বীনা দাস, মেদিনীপুরের মাতঙ্গিনী হাজরা, কিরণবালা মাইতি, লক্ষ্মীরানী দেবী, বাসনবালা মাইতি, মনােরমা দাসী, বসন্তকুমারী বেরা, চট্টগ্রামের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা সিংহ, ইন্দুমতী সিংহ, খুলনার চারুবালা বসু,ময়মনসিংহের ঊষা গুহ, বরিশালের প্রফুল্লমুখী বসু, রাজশাহীর বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী, পুরুলিয়ার লতিকা ঘোষ ইত্যাদি বরণীয় চরিত্রকে। বাংলার শত শত মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে মুর্শিদাবাদেরও বেশ কিছু মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন, মৃনালিনী দেবী, মনিমালা দেবী, কালীদাসী দেবী, জ্যোর্তিময়ী বাগচী, লাবন্যপ্রভা দত্ত, নিরুপমা দেবী, সুবর্ণলতা ভট্ট, বেলারানী দাসী প্রমুখ। ১৮৮৫ সালে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর গান্ধীজীর ডাকে দেশের
শুধু শিক্ষিত মেয়েরাই নয়, স্কুল কলেজের লেখাপড়ার সুযােগ থেকে বঞ্চিত গ্রাম ও শহরের জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বহু নারী স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। সূচনাপর্বে শিক্ষিত অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে সংগ্রাম গণচরিত্রের রূপ  নিলে ধীরে ধীরে সাধারণ ঘরের মেয়েরাও স্বতস্ফূর্তভাবে মিটিং মিছিলে যোগদান, মদের দোকানে পিকেটিং, আইন অমান্য, কারাবরণ এমনকি অনশনে ও ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন। কখনো কখনো নেতৃত্বও দেন। মুর্শিদাবাদ  জেলাতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে একথা উল্লেখযোগ্য যে, যে সমস্ত পরিবারের পুরুষেরা স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন, সেই সমস্ত পরিবারের বেশীরভাগ মেয়েরা সর্বদা প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে বিপ্লবীদের আশ্রয় দিয়ে, খাবার দিয়ে, খবর সংগ্রহ করে স্বাধীনতা সংগ্রামকে রক্ষা করেছেন, বিকশিত করেছেন, উজ্জীবিত করেছেন এ কথা বলা যেতে পারে।

মুর্শিদাবাদ জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামে একজন ব্যক্তিত্বময়ী নারী ছিলেন মৃণাল দেবী। তিনি রঘুনাথগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শিবচন্দ্র রায়, মাতা সুশীলা দেবী। বাবা ছিলেন জঙ্গিপুর কোর্টের উকিল। দিদিমণিমালা দেবীর বিয়ে হয়েছিল জিয়াগঞ্জের ভট্টপাড়ার অধিকারী পরিবারে। সুকুমার অধিকারী ছিলেন মণিমালাদেবীর ভাশুর। যুগান্তর দলের নেতা, জেলা কংগ্রেসের অন্যতম স্তম্ভ। সূর্যকুমার অধিকারী ছিলেন বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জামাই। মণিমালাদেবী এই পরিবারের আবহাওয়ায় প্রভাবিত হয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। ছােট মৃণাল একটু বড় হয়ে জিয়াগঞ্জে দিদির কাছে চলে আসেন এবং একটি রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে বড় হতে থাকেন। বাল্য বয়সে মৃণালদেবীর বিয়ে হয় দুঃসাহসী বিপ্লবী নায়ক যতীন্দ্রনাথ মুখার্জীর (বাঘাযতীন) আত্মীয় পরিবারে। স্বামী ডাক্তার ফণিভূষণ চট্টোপাধ্যায়। তিনি শিকারীও ছিলেন। তার মামাতো

ভাই যতীন মুখার্জী কুষ্টিয়ার জঙ্গলে বাঘ শিকারে গিয়েছিলেন। এমন একটি পরিবেশে মৃণালদেবীর রাজনীতির সূত্রপাত। স্বামীর সাথে বয়সের ব্যবধান ছিল প্রায় ৩০-৩৫ বছরের।
রাজবন্দিদের প্রতি অমানবিক আচরণের প্রতিবাদে ১৯২৯ সালে ১৩ সেপ্টেম্বর টানা ৬৩ দিন অনশন চালিয়ে বিপ্লবী যতীন দাস মৃত্যু বরণ করে অবিস্মরণীয় চরিত্র হিসাবে অমরত্ব লাভ করলেন।
যতীন দাসের মৃতদেহ নিয়ে লাখো লাখো মানুষের শোক মিছিলে সামিল কিশোরী মৃণাল বার বার একটি প্রশ্নে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন, কি হবে বাংলার জেলে বন্দী হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীর? কি পরিণতি হবে বরিশাল জেলে বন্দি দীর্ঘকাল অনশনরত বিপ্লবী নেতা সতীণ সেনের? ১৯২৯ সালে ৬ই অক্টোবর নেতাজীর আহ্বানে পালিত হয়েছিল নিখিলবঙ্গ সতীন সেন দিবস।
১৯২৯ সালে মার্চ মাসে সতীন সেন গ্রেপ্তার হন্। জেলের মধ্যে সতীণ সেনের উপর অকথ্য অত্যাচার চালানাের প্রতিবাদে সতীন সেন জেলের মধ্যে অনশন শুরু করেন।

এই অত্যাচারের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। জেলের ভেতর অনশনের সংহতি জ্ঞাপন করে অত্যাচারের প্রতিবাদে মৃণালদেবীও।মৃণালিনী দেবী এগিয়ে এসে কয়া গ্রামের অনশন মঞ্চে অনশন শুরু করলেন।
টানা ৩৯ দিন মৃণালদেবী অনশন করেন। যুগে যুগে বীর সংগ্রামীরা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে এইভাবেই এগিয়ে আসেন, মৃণালদেবী তাদের মধ্যে একজন স্মরণীয় চরিত্র একথা বলা যায়। সে সময়ের সংবাদে কিছু কথা জানা যায়। ১৯২৯ সালের ৬ অক্টোবরের ‘দৈনিক বঙ্গবানী’তে প্রকাশিত হয় “অনশনব্রতে ভদ্রমহিলা। রাজনৈতিক বন্দিদের প্রতি আচরণের প্রতিবাদ। শ্রীযুক্ত সুভাষ বসুর পত্র। সম্ভবত তিনি ভারতবর্ষের প্রথম ও একজন মহিলা রাজনৈতিক কর্মী যিনি এত দীর্ঘ সময় অনশন করেছিলেন। সে সময় সুভাষ বসু এক চিঠিতে তাকে অনুরােধ করেছিলেন অনশন তুলে নেবার জন্য। মৃণাল দেবীর অনশন খুবই আলােড়ন সৃষ্টি করেছিল। লাহরে সেন্ট্রাল জেলে বন্দী ভগৎ সিংহের কাছেও সংবাদ পৌঁছায়। তিনি অল্পবয়স্ক মেয়েটির সংগ্রামী ভূমিকাতে খুশী হয়ে মেয়েটিকে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। পরে ভগৎ সিং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অনুপ্রাণিত হন মৃণাল দেবী ও মনিমালা দেবী। পরবর্তীতে কলকাতায় হাজরা পার্কে জনসভা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। অনেকের মধ্যে বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী, লাবন্যপ্রভা দত্ত, মৃণাল দেবী ও সেই সভায় ছিলেন। জনসভাকে ভাঙ্গার জন্য পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও গুলি চালায়। একজনকে বাঁচাতে গিয়ে পুলিশের বেয়নটের খোঁচায় মৃণালদেবী রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। শাস্তি হিসাবে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ১৪ দিনের কারাবাস হয়। পরবর্তীতে ১৯২৯ সালের পর কাজের ক্ষেত্র হিসাবে মুর্শিদাবাদে চলে আসেন মৃণালদেবী। ১৯২৯ সালের নেতাজী রঘুনাথগঞ্জে মৃণালদেবীর বাড়ী উঠেছিলেন বলে শােনা যায়। সে বছরই কাউন্সিল নির্বাচনের ব্যাপারে নেতাজী জিয়াগঞ্জে এসেছিলেন। উঠেছিলেন ৩০ জুলাই ১৯৩৯। কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের জনসভায় সুকুমার অধিকারীর বাড়ীতে। মৃণালিনী দেবী।সেখানে মৃণাল দেবীও ছিলেন। দ্বিতীয় সভা ১৯৩৮ সালে। সুভাষচন্দ্র বসু আসেন। মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষের মনে সে এক স্মরণীয় দিন। দিদি মনিমালাদেবী স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মী। জেলায় নারী সংগঠন গড়ার জন্য  তাঁর উল্লেখযােগ্য ভূমিকা ছিল। মুর্শিদাবাদে এসে মৃণালদেবী গ্রামস্তর পর্যন্ত কমিটি গঠন ও সদস্য সংগ্রহের উপর গুরুত্ব দেন। নেতাজীর নেতৃত্বে আপােষহীন বিপ্লবী ধারাকে প্রসারিত করার চেষ্টা করেন। জেলাস্তরে তখন নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন ব্রজভূষণ গুপ্ত, ডাঃনলিনাক্ষ সান্যাল, শশাঙ্কশেখর সান্যাল, কেদারনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। কংগ্রেসের মঞ্চের মধ্যে LeftConsolidation-এর তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী।

মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে মৃণালদেবী, মনিমালাদেবী সহ অসংখ্য মানুষ ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারী পতাকা হাতে এগিয়ে চলেছেন। বারোয়ারী তলায় মিছিল আসতেই পুলিশ হামলা করে। পুলিশের নির্মম আক্রমণে গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত হলেন মৃণালদেবী। গ্রেপ্তার করা হল তাকে। লালবাগ কোর্টে বিচার হল। ৬ মাসের কারাদণ্ডে বহরমপুর জেলে অবস্থান করেন। বহরমপুর জেলে অবস্থান কালীন সংবাদ পান স্বামী মৃত্যুশয্যায়। স্বামীকে দেখতে জেল থেকে প্যারােলে বেরিয়ে আসেন।

দেখলেন শেষ দেখা। তাঁকে শেষ বিদায় জানিয়ে ফিরলেন আবার সেই বহরমপুর জেলে। বিচ্ছেদের বেদনায় মুষড়ে পড়লেও স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে রইলেন। সে সময় মহাত্মা গান্ধীর ডাণ্ডি অভিযানে ৬০ হাজারের বেশী মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে। জেলের গেটে ছাড়া পাওয়ার পর মৃণালদেবী পুনরায় গ্রেপ্তার হন। তারপর তাকে পাটনায় নজরবন্দি করে রাখা হয়। পাটনা থেকে ছাড়া পেয়ে সােজা মুর্শিদাবাদে চলে আসেন এবং এই জেলাতেই ভালভাবে কাজ শুরু করেন।

১৯৩৩-৩৪ সালে রাষ্ট্রীয় মহিলা সমিতির শাখা মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটি সর্বপ্রথম গঠিত হয়। মৃণালদেবী সভানেত্রী নির্বাচিত হন। ইতিমধ্যে মৃণালদেবী অনেকখানি পরিনত। তিনি জেলা ও জেলার বাইরে ঘুরতে শুরু করেন। জাতীয় সংগ্রাম সপ্তাহ প্রস্তুতিতে দেশপ্রিয় পার্কে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। মৃণালদেবী সেই সভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন ‘Hindusthan Standard’ পত্রিকায় প্রকাশিত “In Deshapriya Park meeting Sm. Mrinal Devi address a huge gathering on Sunday last the Question of unconditional release of hunger striking political Prisoners”(1 oct. 1938)

মুর্শিদাবাদ জেলায় সংগঠন গড়ার কাজে কয়েকটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। যেমন (১) নেতাজীর নেতৃত্বাধীন আপােষহীন বিপ্লবী ধারাকে প্রসারিত ও সংহত করার উদ্দেশ্য জনগণকে সংগঠিত করা (২) নারী সমাজকে সংগঠিত করা ও এমন কি গ্রামাঞ্চলের নারী সমাজকে সংগঠিত করার উপর জোর দিয়েছিলেন। (৩) জঙ্গিপুর মহকুমাকে উপযুক্তভাবে সাংগঠনিক ভিত্তির উপর দাঁড় করানাের চেষ্টা করেছিলেন। (৪) বাল্যকাল থেকে লেখার চর্চা ছিল। মতবাদিক অভিযান চালানাের জন্য কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ লেখার উপর জোর দিয়েছিলেন যাতে জনগণ উদ্বুদ্ধ হন।

১৯৩৯ সালের ১৪ আগস্ট সুভাষ বসু কংগ্রেস থেকে বহিস্কৃত হন। এই ট্র্যাজেডির শিকার ভারতবর্ষের কোটি কোটি মানুষ। কিন্তু কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হবার পর সাধারণ মানুষ নেতাজীর পাশ থেকে সরে যান নি। দেশের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদবিরােধী আপােষহীন সংগ্রামী মঞ্চ গড়ে তােলার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভ্যর্থনা ও সম্বর্ধনা দেওয়ার কাজ চলতে থাকে। ১৯৩৯ সালের ৩০ নভেম্বর বহরমপুরে সুভাষচন্দ্র বসুকে অভ্যর্থনা জানানাে হয়। ব্যাপক প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে মুর্শিদাবাদ মহিলা রাষ্ট্রীয় সমিতির পক্ষ থেকে অভিনন্দন পত্রে সুভাষকে সম্বােধিত করা হয় ‘দেশগৌরব’ হিসাবে। মৃণালদেবী তখন মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা। মহিলারা বলেন, “কত বাধা, কত বিঘ্ন, কত জটিলতা আমাদের সামনে তৎসত্ত্বেও কোন অগ্রদূতের ভাবধারার স্পন্দনে আবার যদি মানুষ জেগে ওঠে তবে তার সুযােগ নেব না কেন, তাই তাে আমাদের এই আয়ােজন।”

মৃণালদেবী যেমন সুবক্তা ছিলেন, জনসাধারণকে উদীপ্ত করার ক্ষমতাও তাঁর ছিল প্রচুর। তার ব্যক্তিত্বের কারণে তার চাইতে বয়সে বড় এমন মানুষেরাও তাকে শ্রদ্ধা করতেন। জেলা কংগ্রেস নেতা কেদারনাথ মুখােপাধ্যায় রঘুনাথগঞ্জের নেতা প্রদ্যুৎ কুমার সাধুকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, “মৃণাল শ্রদ্ধার পাত্রী। ওকে যেমন করে পার ধরে রাখ।”মৃণালদেবী কেবলমাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামীই ছিলেন না, সাহিত্যজগতেও তার বিচরণ ছিল সাবলীল। তাঁর জাতীয় সপ্তাহ আন্দোলন উপলক্ষ্যে কবিতা দেখলেও তা বােঝা যায়।

|| জাতীয় সপ্তাহ।।
সেদিন মানুষ পশুরে হৃদয়ে বরি
বিনা অপরাধে মরিল মানুষে প্রাচীর রুদ্ধ করি।
কামানের মুখে ছুটেছিল সেই দারুন ‘অগ্নিদাহ’
সেই বানী বয়ে আসিয়াছে ফিরে এ জাতীয় সপ্তাহ।

সংহতি’ মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত
।। কারার গান।।
মুক্তি পিয়াসী বন্দি আমরা
বন্দিনী দল ভাই
কণ্ঠ ছাড়িয়া কথা কহিবার
স্বাধীনতাটুকু নাই।।
হাসিতে বাঁধন কাসিতে বাঁধন
বজ্র বাঁধনে বেঁধেছে কাঁদন
সব বন্ধনে বাঁধা পড়ি তবু
মুক্তির গান গাহ

    (১লা জুলাই ১৯৩২ সাল বহরমপুর জেল)

আজ থেকে প্রায় ৮০-৯০ বছর আগে তৎকালীন সমাজে মেয়েদের সামাজিক বিধিনিষেধ, পুরুষদের আধিপত্যবাদী মানসিকতার বাধা সমস্ত কিছুকে উপেক্ষা করে ব্রিটিশ সরকারের অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে কাজ করা খুব সহজসাধ্য ছিল না। মৃণাল দেবী সহ সমস্ত মহিলা কর্মীদের এই কষ্টসাধ্য কাজটি সেদিন করতে হয়েছে। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও একজন স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা থেকে ধীরে ধীরে তিনি একজন নেত্রী হিসাবে স্বীকৃত হয়েছিলেন। জঙ্গিপুর মহকুমায় স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্ম প্রক্রিয়ায় মৃণালদেবী, মনিমালাদেবী ছাড়াও সে সমস্ত মহিলাদের যতটুকু নাম সংগ্রহ করা গেছে তাঁদের মধ্যে শ্রীমতি হৈমবতী সাধু, শ্ৰীমতী প্রভাবতী দেবী, শ্রীমতী বীণাপানি চন্দ্র, শ্রীমতী কালীদাসী চন্দ্র, শ্রীমতী বসন্ত কুমারী দেবী, শ্ৰীমতী পটেশ্বরী দেবী, শ্রীমতী দয়াময়ী দেবী, শ্রীমতী সুশীলাবালা মিত্র, শ্রীমতী সুলক্ষণা দেবী প্রমুখ উল্লেখযােগ্য।
১৯৪২-এ ভারতছাড়াে আন্দোলনের অনাকাঙ্খিত পরিণতি ও পরে ১৯৪৫-এ ১৮ আগস্ট বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজীর মৃত্যু সংবাদে মৃণালদেবী কাতর হয়ে পড়েন। এছাড়া গান্ধীবাদী নেতৃত্বের আচরণে তিনি হতাশ হন। শেষ পর্যন্ত আপোেষ রফার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার হস্তান্তর হয়। দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার পর দেশের পরিস্থিতি দেখে অসহনীয় যন্ত্রনায় রাজনীতি থেকে তার দূরত্ব বেড়ে যায়। ১৯৭২-৭৩ সালে একবার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের তাম্রপত্র দেওয়া হচ্ছিল। দেশে সে সময় নিদারুন খাদ্য সংকট ও মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। তাই সরকারের আমন্ত্রনে সাড়া দেন নি মৃণালদেবী। তিনি লিখেছিলেন, “দেশের বর্তমান চূড়ান্ত খাদ্য সংকট ও অন্যান্য সমস্যা যার জন্য দায়ী বর্তমান সরকার সেই সরকারের দেওয়া সম্মান গ্রহণ করতে আমি অক্ষম।”
১৯৭৯-৮০ সালে শিক্ষা সংকোচন বিরোধী স্বাধিকার রক্ষা কমিটির পতাকা তলে প্রাথমিক স্তরে পাশ – ফেল ও ইংরাজী শিক্ষা  তুলে দেবার প্রতিবাদে আচার্য সুকুমার সেন, ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায়, বিশিষ্ট সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র, মনােজ বসু প্রমুখ আন্দোলনে নামেন। তারই প্রভাবে রঘুনাথগঞ্জে শিক্ষাবিদ শরদিন্দুভূষণ পাণ্ডে, সাহিত্যিক খগেন্দ্রনাথ বড়াল সহ শিক্ষক ছাত্রদের সাথে বহু বছর পরে মৃণালদেবীকে অবস্থানে দেখা যায়। ১৯৮২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বহরমপুর শহরে জেলা শাসকের অফিসের সামনে মহিলাদের সমাবেশ হয়েছিল ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে। মৃণালদেবী সেই সমাবেশে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে তার বৃদ্ধ বয়সেও ছিল প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। সেদিন সমাবেশ চলাকালীন খবর আসে বহরমপুর গার্লস কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী ও ১৯৭৬ সালের জি. এস. সবিতা রায় স্বামীর দ্বারা খুন হয়েছে (বধূহত্যা)। মৃণালদেবী এই সংবাদে মুষড়ে পড়েন। ১১ই সেপ্টেম্বর ১৯৮২ সাল আকস্মিকভাবে তার মৃত্যুর সংবাদ পাই।  রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তিতে উপলব্ধির গভীরতায় জীবনের শেষ লগ্নে আবারও ভাষা শিক্ষা আন্দোলনে ও নারী নির্যাতন বিরােধী আন্দোলনে জনগণের সঙ্গে অংশগ্রহণ তাকে এক বিশিষ্ট ব্যতিক্রমী নারী চরিত্র হিসাবে জেলার ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা করেছে। লাবণ্যপ্রভা দত্ত ১৮৮৮ সালে পিতার মামার বাড়ীতে বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মানুষও হন বহরমপুরেই। পিতা হেমচন্দ্র রায় মাতা কুসুমকুমারী দেবী। সেটা ছিল গোঁড়া রক্ষণশীল এক বৈষ্ণব জমিদার পরিবার। গ্রহণ লাগলেই বাড়ীর বউ মেয়েদের পাল্কিসুদ্ধ গঙ্গায় চুবিয়ে আনা হত।
ছােটবেলায় লাবণ্যপ্রভা এই নিষ্ঠুরপ্রথা মানতে পারেনি। মাত্র ৯ বছর বয়সে খুলনা জেলার শ্রীপুর গ্রামে উকিল যতীন্দ্রনাথ দত্তের সঙ্গে বিয়ে হয়। লাবণ্যপ্রভা দত্তের বড়ভাই সুরেন্দ্রনাথ বিপ্লবী বারীণ ঘোষের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। দাদার আদর্শের প্রভাবে প্রভাবিত হন এবং দেশসেবায় নিজেকে নিয়ােজিত করেন। এমনকি তার প্রভাবে তার স্বামীও স্বদেশীভাবাপন্ন হন। মাত্র ২৩ বছর বয়সে হঠাৎ স্বামীর মৃত্যু হলে তিনি শােকগ্রস্থ হয়ে পড়েন এবং পুরী চলে যান।

দেশব্যাপী স্বাধীনতা আন্দোলনের ঢেউ, ১৯২৯ সালে লাহাের জেলে অনশনে যতীন দাসের মৃত্যু, লাবণ্যপ্রভাকে ঘরে থাকতে দিল না। এই সময়ে কন্যা শােভারানী সহ স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি পরিপূর্ণভাবে আত্মনিয়ােগ করেন। ১৯৩০ সালে দক্ষিণ কলকাতা কংগ্রেসের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বহরমপুরে গিয়ে ঐ গোঁড়া জমিদার বাড়ির বউদের বাইরে নিয়ে এসে সভা করেন এবং চার জায়গায় চারটি মহিলা সমিতি গঠন করেন। গোঁড়া পরিবারের মেয়েদের বাইরে নিয়ে এই কাজ করা সেদিন যথেষ্ট কঠিন ছিল।

১৯৩১ সালে ২৬ জানুয়ারী কলকাতার শােভাযাত্রায় পুলিশের লাঠির আঘাতে তার ডানহাত ভেঙ্গে যায়। ভাঙ্গা হাত নিয়েই তিনি বক্তব্য রাখেন ও আইন অমান্য করেন। এর ফলে রাজদ্রোহের অভিযােগে ৬ মাস সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ হয়। ১৯৩২ সালে হিজলীর রাজবন্দিদের উপর গুলি চালনার প্রতিবাদে বক্তৃতা দেবার জন্য তার ১৮ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। দেশসেবা ও জনসেবার আদর্শ নিয়ে ‘আনন্দমঠ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকেই বহু কর্মীকে আইন-অমান্য আন্দোলনে
পাঠানাে হতাে। ১৯৩৯ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির মহিলা সাব কমিটির সম্পাদিকা হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯৪০ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভাপতি সুরেন্দ্রমােহন ঘােষ সত্যাগ্রহ আন্দোলন করে জেলে চলে গেলে লাবণ্যপ্রভা দত্ত বি. পি. এস. সি’র সভানেত্রী মনােনীত হন।
১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সভানেত্রী ছিলেন। বিদেশী শাসকের অত্যাচার অগ্রাহ্য করে এই স্নেহময়ী নেত্রীর পরিচালনায় বিপ্লবীরা সেদিন কারাগৃহে প্রবেশ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে ৬ জুন এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর মৃত্যু হয়। এই মহীয়সী নারীর স্বাধীনতা সংগ্রামের ভূমিকা স্মরণ না করে কোনাে উপায় নেই। রাজনৈতিক আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল কলকাতাকে কেন্দ্র করে তার ভূমিকা বিরাটত্বেও ছিল অতীব গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সামনে তিনি নিজেকে এক স্মরণীয় চরিত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

বিভূতিভূষণ ভট্টের বােন নিরুপমাদেবী ১৪ বছর বয়সে বিধবা হয়ে পিতৃগৃহে ফিরে আসেন। বহরমপুরে ফিরে আসার পরই নিরুপমাদেবীর সাহিত্যসৃষ্টির নবপর্যায় শুরু হয়। বিপ্লবী সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্নেহধন্যা ছিলেন। বহরমপুরের উকিলপাড়ার বাড়িটি যথেষ্ট বড় ছিল। এই বাড়ির অনেকেই অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কয়েকবার তিনি ব্রিটিশ গােয়েন্দাদের চোখে ধুলাে দিয়ে বিপ্লবী কর্মীদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিতে সহায়তা করেছিলেন।

১৯৩২ সালে ২৬ শে জানুয়ারী আইন-অমান্য আন্দোলনে মনুমেন্টের তলায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে গিয়ে পুলিশের দ্বারা অত্যাচারিত হন আভা দে। বহুসংখ্যক গ্রেপ্তার হওয়া সংগ্রামীদের মধ্যে আভাদেবীও ছিলেন। গ্রেপ্তার হয়ে বহুদিন ছিলেন বহরমপুর জেলে। প্রাণবন্ত এই নারীর সকলের উপকারে ঝাপিয়ে পড়া ছিল অন্যতম আকর্ষণীয় গুণ। জেলের মধ্যে সকলকে সংগ্রামী মানসিকতা ও আনন্দে মাতিয়ে রাখতেন। অন্যায়ের কাছে নিজে মাথা নত করতেন না এবং সকলকেই সে শিক্ষা দিতেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা এমন এক সৈনিকের মৃত্যু কিন্তু অনেকেই জানতে পারে নি। ভাবলেই মন বিষন্ন হয়ে যায়।
১৯৩২ সালে বন্দিদের প্রতি দুর্ব্যবহার ও পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন শহরে যেমন জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জে সুনীত কোরিয়া এবং কিরণ দুগরের নেতৃত্বে ৫০০ মহিলা মিছিল করে। বহরমপুর, জঙ্গিপুরে মেয়েরা থানা ঘেরাও ও পিকেটিং করে। পুলিশ পুরুষ পিকেটারদের গ্রেপ্তার করে এবং জাতীয় পতাকা ছিনিয়ে নেয়। মহিলা কর্মীরা থানা ঘেরাও করার ফলে গ্রেপ্তার হওয়া পিকেটারদের মুক্তি ও জাতীয় পতাকা ফেরত দিতে পুলিশ প্রশাসন রাজি হয়।

এই সমস্ত মহিলা কর্মীদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য নাম হল মৃণালদেবী, চুমুকুমারীদেবী, কমলাদেবী, কিরণ দুগর, উমা রায়, লক্ষ্মীদেবী প্রমুখ। ভবতারণ সান্যালের স্ত্রী কালীদাসী দেবী ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। ১৮৭৯ সালে তার জন্ম ,মৃত্যু ১৯৪১ খৃষ্টাব্দে। ভবতারন সান্যাল মুর্শিদাবাদের ডােমকলে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে প্রধান শিক্ষক হন। তাঁর নামেই বর্তমানে স্কুলটির নাম ডােমকল ভবতারণ হাইস্কুল। কালীদাসী দেবী বিপ্লবীদের আশ্রয় দিতেন। বিপ্লবীদের আশ্রয়দানের মধ্যে দিয়ে যে সাহচৰ্য্য তিনি পেতেন তার মাধ্যমেই স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। বহরমপুরে বেশ কয়েকবার আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৩০ সালে বহরমপুর আইন অমান্য আন্দোলনে ছিলেন প্রায় দশ হাজার মানুষ। সেই মিছিলে তিনি অংশগ্রহণ করেন। পুত্র শশাঙ্কশেখর সান্যাল তখন আইনজীবী। সঙ্গে কালীদাসীর ভাইপাে মােহিত ভট্টাচাৰ্য্য নিশ্চিত গ্রেপ্তার জেনেও হাতে
ঝাণ্ডা নিয়ে আইন অমান্যে অংশ নিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

১৯৩২ সালের আইন অমান্যে কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ প্রচণ্ড দমন পীড়নের ভয়ে অংশ নেন না। কিন্তু সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসেন, অসংখ্য মহিলা সমেত। সেদিনও কালীদাসী সান্যাল, সুবর্ণলতা ভট্ট অসীম সাহসে আইন অমান্য করে কারাবরণ করেন। এখানে উল্লেখযােগ্য গােরাবাজারের সুবর্ণলতা ভট্ট একজন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। ১৯৩০
সালে একই দিনে জিয়াগঞ্জ, জঙ্গিপুর, কান্দি, বেলডাঙ্গায় ও বহরমপুরে আইন অমান্য হয়। বহরমপুরে বিশাল মহিলা মিছিলের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে। বহুজন আহত হন। গ্রেপ্তার প্রায় তিনশত। কালীদাসী সান্যাল ও সুবর্ণলতা ভট্ট সেই মিছিলে ছিলেন। মেয়েদের অংশগ্রহনে সমস্ত রক্ষণশীলতার প্রাচীর ভাঙ্গতে শুরু করে। বহু মহিলা স্বাধীনতা স্পৃহায় রাজপথে জনপথে নেমে আসেন। একবার নলিনাক্ষ সান্যালের বিয়েতে ‘মুসলমান’ নজরুল ইসলামকে ব্রাহ্মণদের সাথে একসঙ্গে খাওয়ানাের অপরাধে সান্যাল পরিবারকে একঘরে করা হয়। সান্যাল পরিবারের মেয়েরা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করেন।
শশাঙ্কশেখর সান্যালের স্ত্রী ঊষারানী সান্যাল বহুদিন মুর্শিদাবাদ মহিলা সমিতির সভানেত্রী ছিলেন। গৃহের মধ্যে বহু বিপ্লবীকে আশ্রয় দিয়েছেন। তাঁদের যত্ন করেছেন আবার সংগঠনের কাজও করেছেন।

শিক্ষাব্রতী, স্বাধীনতা সংগ্রামী ডঃরেজাউল করিম সাহেবকে খুব যত্ন করতেন। বদরুদোজ্জা সাহেব মাসাধিককাল শশাঙ্কশেখরের বাড়ীতে ছিলেন। উষারানী বদরুদোজ্জা সাহেব না আসা পর্যন্ত না খেয়ে বসে থাকতেন। শুধু তাই নয় বদরুদোজ্জা সাহেবের জামা-কাপড় নিজের হাতে কেচেও দিতেন। কালীদাসী দেবীও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে
ছিলেন। এমন আত্মীয়তা আজ বিরল হয়ে উঠেছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণকে রাজনীতির হাতিয়ার করে খুন, ধর্ষণ, লুঠতরাজ সংগঠিত করে ভােটব্যাঙ্ক গড়ে তােলার বর্তমান পটভূমিতে এমন নজির অনুসরনীয় ও প্রেরণাময়। বর্তমানে খাগড়া গােয়ালপাড়া মাঠ যা দশমুণ্ডু কালীর নামে খ্যাত, সেখানেই কংগ্রেসের সভা হত। ১৯৪৩ সালে ঊষারানী সান্যাল এরকম একটি সভায় সংকল্প পাঠ করেন এবং ঘােষণা করেন প্রয়ােজনে বিদেশীদের সাহায্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করতে হবে। সংকল্প পাঠ করে পতাকাও তুলেছিলেন। ১৯৪৪ সালে মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি’ গড়ে ওঠে। হরিদাসী মণ্ডল সহ আরও অনেকে এই সমিতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গান্ধীজি এবং সুভাষচন্দ্র বহরমপুরে এসেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী শশাঙ্ক সান্যালের পুত্র স্বাধীন সান্যাল (প্রখ্যাত আইনজীবী) ছােটবেলায় মায়ের কোলে চড়ে তাদের দেখবার স্মৃতি আজও ভােলেননি।

কলকাতার মেয়ে সাবিত্রী সিংহ। তাঁর বিয়ে হয়েছিল বহরমপুর শহরের কাদাই অঞ্চলে ২ নং জঙ্গু ডাক্তার সেনের গােপাল কৃষ্ণ দাসের সঙ্গে। তিনি একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। খুব অল্প বয়সে বিধবা হন। দেশের বাড়ী নদীয়াতেই থাকতেন। ১৯৩১ সালে কান্দিতে প্রভিসিয়াল কনফারেন্সে প্রতিনিধি হয়েছিলেন সভাপতি ছিলেন বিমল সিংহ রায় (অতীশ সিংহের বাবা)। ১৯৩২ সালে আইন অমান্যে কারাবরণ করে কৃষ্ণনগর জেলে, পরে বহরমপুর জেলে এক বছর ছিলেন। নেতাজী তখন বহরমপুর জেলে। জেল থেকে ছাড়া পান এবং নেতাজীর সঙ্গে দেখা হয় বহরমপুরেনতুন বাজার জয় কালীবাড়ির সামনে দত্ত বাড়ীতে। কান্দি সম্মেলনেও নেতাজীর সাথে দেখা হয়। বহরমপুর শহরের এই স্বাধীনতা সংগ্রামী গৃহবধূ ১০৪ বছর বেঁচেছিলেন। শেষ জীবনে থাকতেন পৈত্রিক দেশের বাড়ী বেথুয়াডহরীতে। জলঙ্গি ব্লকের খয়রামারীর জ্যোর্তিময়ী অধিকারী স্বাধীনতাসংগ্রামী ছিলেন। বহরমপুরের এক মিছিলে জ্যোর্তিময়ী অধিকারী এবং বহরমপুরের শৈলদেবী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন।কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যাপক সত্যনারায়ণ সিংহের পত্নী শান্তিনিকেতনের স্নাতক সুষমা সিংহ, বেলাদেবী এঁরা বহরমপুরে নারী শিক্ষা বিস্তারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তাদেরই উদ্যোগে ১৯২৮ সালে গড়ে ওঠে ভট্ট বালিকা বিদ্যালয়। সম্ভবত জেলায় প্রথম বালিকা বিদ্যালয়। সে সময় আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন মহারাজা শ্রী মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী। বর্তমান সেন্ট্রাল জেলের একটা অংশে এই বিদ্যালয় গড়ে উঠলেও, ১৯৩০ সালে স্কুলটি রাজ স্টেটের একটি ভবনে উঠে আসে। ১৯৪৯ সালে ওই ভবনটি সহ ১১ বিঘা জমি দান করেন মহারাজা শ্রীশচন্দ্র নন্দী। স্কুলটির নাম হয় মহারাণি কাশীশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়। অপর একটি স্কুল সুষমা সিংহের উদ্যোগে স্থাপিত হয়। স্কুলটি প্রথমে শিল্প শিক্ষামূলক ছিল, পরে নাম হয় শিল্পমন্দির। সুষমা সিংহ একজন সমাজসেবী ছিলেন। সমাজসেবার মধ্যে দিয়েই দেশ সেবার কাজ করে গেছেন। নিরুপমা দেবী ও সুষমা সিংহ দুটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মেয়েদের বাড়ি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা, পড়ানাে, সেলাই শেখানাে, আচার তৈরী করা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে নারী শিক্ষার প্রসারে সাহায্য করেছিলেন। এই কাজ সেদিন স্বদেশী আন্দোলন ও নারী জাগরনের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ সম্পন্ন ছিল। নবজাগরনের বিস্তারেও তা ছিল খুব প্রয়ােজনীয়।

নূরন্নেছা খাতুন বিদ্যাবিনােদিনী ১৮৯৪ সালে সালার ব্লকের শাহপুর গ্রামে শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মুসলিম মহিলা উপন্যাসিক তিনিই প্রথম। তার প্রথম উপন্যাস স্বপ্নদ্রষ্টা’ ১৯২৩ সালে প্রকাশিত। তিনি স্বদেশী আন্দোলনের পৃষ্ঠপােষক ছিলেন। তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় নারীদের দুরবস্থা দেখে মনে প্রানে চেয়েছিলেন নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতা। বাংলা ভাষা, ইংরাজী শিক্ষা, নারী শিক্ষার পক্ষে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তাঁর লেখনী, বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। সমাজে রেঁনেশার যে গতিধারা বিদ্যাসাগর, শরৎ, নজরুল, রবীন্দ্রনাথে পরিণতি পেয়েছিল সেই মহান রেঁনেশার মহতী সৃষ্টি হিসাবে নূরন্নেছা তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্য দিয়ে মুসলিম সমাজে তাে বটেই ব্যাপক নারীসমাজে ও সামগ্রিক সমাজে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এক নেতৃত্ব হিসাবে স্মরণীয়।
স্মরণীয় রেঁনেশার গতিবেগকে ত্বরান্বিত করার মহীয়সী চরিত্র হিসাবে। ১৯১২ সালে হুগলী জেলার আইনজীবী গােলাম মােহম্মদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ছােটবেলায় স্কুল কলেজের পড়ার সুযােগ পেলেও স্বামীর সংস্পর্শে ইংরাজী শেখার সুযােগ পান। স্বামীর সঙ্গে দেশ বিদেশে ঘুরে বহু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ তাকে খুব ব্যথিত করেছিল। ১৯৫২ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঢাকায় চলে আসার পর কমলাপুরে একটি বাড়ী নির্মাণ করেন। এই বাড়ীর নাম দেন ‘উপকূল’। দেশ বিভাগ জনিত বেদনাই ফুটে উঠে এই বাড়ীর নামে। তাঁর নির্দেশ মতাে তার মৃত্যুর পর এই বাড়ী বিক্রি করে সেই টাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়া হয়েছিল। বহরমপুরে গুপ্ত পরিবারের তারাপদ গুপ্ত, প্রফুল্লকুমার গুপ্ত। তাদের গ্রামের বাড়ী কান্দি থানার আন্দুলিয়া গ্রামে। পুলিশ মাঝে মাঝে গােরাবাজার ও আন্দুলিয়ার বাড়ীতে হানা দিত এই বিপ্লবীদের সহ অন্যান্যদের ধরার জন্য। দক্ষিণেশ্বর বােমা কেস, ডাকগাড়ী লুঠ ও মেছােবাজার বােমা কেসে

প্রফুল্লকুমার গুপ্তকে ধরবার জন্য বাড়ী সার্চ করত। সেই সময় পুলিশকে সামাল দিতেন প্রফুল্লকুমার গুপ্তের মা হিরন্ময়ী দেবী। তিনি পুলিশের হাত থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের রক্ষা করতেন। এ সমস্ত সন্তানদের বাড়ীতে আশ্রয় দিতেনও যত্ন নিতেন। পাঁচথুপীর ইন্দুমতী দেবীও স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন।

কান্দি মহকুমায় স্বদেশী আন্দোলন ও বয়কট আন্দোলনের গভীর প্রভাব পড়ে। জেমাে কান্দি ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে শক্তিশালী স্বদেশী আন্দোলন সংগঠিত করেন রিপন কলেজের তদানীন্তন অধ্যক্ষ এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সম্পাদক রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী। তাঁর নেতৃত্বে এই অঞ্চলের জনসাধারণের এক বিশাল মিছিল ব্রিটিশ সরকারের বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে। স্লোগান দিতে দিতে রাস্তা পরিক্রমা করে। ১৯০৫ সালের ১ লা নভেম্বর হােমতালায় একটি সভা হয়। সমাজের নারী-পুরুষ হিন্দু- মুসলমান সকলেই এই আন্দোলনে যােগ দেন। ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার দিন জেমাে-কান্দির মানুষ সব দোকানপাট বন্ধ করে হরতাল পালন করে। স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলনের সময় কান্দিতে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল ‘বঙ্গ লক্ষ্মীর ব্রতকথা’ নামক এক দেশাত্মবােধক পুস্তক রচনা। বঙ্গভঙ্গের প্রতিকারের জন্য হিন্দু- মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি রক্ষা এবং বিদেশী দ্রব্য বর্জন এবং স্বদেশী দ্রব্য ব্যবহারের জন্য এই ব্রতকথা পাঠ করে বঙ্গের নারীরা বাংলার সম্পদের দেবী লক্ষ্মীর নিকট প্রতিজ্ঞা ও সংকল্প করে।

রামেন্দ্রসুন্দর তার ‘বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথার’ ভূমিকায় লিখেছেন যে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার দিন তার মায়ের ডাকে পাঁচশত মহিলা তাদের পরিবারে বিষ্ণুমন্দিরের উঠোনে সমবেত হয় এবং ‘বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা’ পাঠ করেন তার কন্যা গিরিজাদেবী। এইদিন অরন্ধন পালন করেন ও রাখীবন্ধন অনুষ্ঠান হয়। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা পুস্তকখানি বাংলার সমস্ত জনসাধারনকে বিশেষ করে মহিলাদের কে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য সংহতি রাখার এবং স্বদেশী দ্রব্যের ব্যবহার ও বিদেশী দ্রব্য বর্জনের জন্য আহ্বান জানায়। ১৯৩০-৩২ সালে আইন অমান্য আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জেলা কংগ্রেসের তৎপরতা বেড়ে যায়। এই আন্দোলনে মহিলাদের ভূমিকা খুবই উল্লেখযােগ্য। জিয়াগঞ্জ, সালার, জঙ্গিপুর, বহরমপুর থেকে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবক তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে মহিষবাথানে আইন অমান্য করে কারাবরণ করেন।
বিদেশী পণ্য বর্জন ও মাদক বিরােধী আন্দোলন মেয়েরা সংগঠিত করে। জিয়াগঞ্জ ও বহরমপুরে সরােজিনী নাইডুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেশ কিছু মহিলা স্বেচ্ছাসেবী আইন অমান্য ও থানা ঘেরাও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

১৯৩২ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে কারাদণ্ডিত হয়ে বহরমপুর জেলে বন্দি ছিলেন— ঊষারানী ঘােষ, সিন্ধুবালা কোলে, নির্মলা দেবী, কাননবালা পট্টনায়ক, সুনীতি সেন, হেমালিনী ঘােষ, রাধারানী দেবী, ষােড়শীবালা দত্ত, পারুল দত্ত, ঊষাবালা দত্ত, চারুশীলা পাল, সুমিত্রা দেবী প্রমুখ প্রায় পঞ্চাশ জন মতাে স্বাধীনতা সংগ্রামী।

মুর্শিদাবাদ জেলায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদান লিখতে গিয়ে আমার অজানা বহু অখ্যাত, অনামী ও অজ্ঞাত চরিত্র বাদ থেকে গেল, যাঁরা বাইরে এবং অন্তঃপুরের মধ্যে থেকেও স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মকাণ্ডকে ত্বরান্বিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আশা করব আগামীতে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হবে সেই সমস্ত মহীয়সীর কথা। প্রাসঙ্গিক ভাবে বলে রাখি এ জেলায় জন্ম না হলেও এখানে এসেছেন, মহিলাদের সংগঠিত করেছেন এ জেলায় বন্দী হয়ে ছিলেন এমন একজনের কথাও এই স্মরনিকায় কৃতজ্ঞতা স্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতবর্ষ আজ স্বাধীন। আজ আমাদের ভাবতেই হচ্ছে হাজারও বিপ্লবীর আত্মত্যাগ, অভাবনীয় নির্যাতন সহ্য করা, থানার মধ্যে মহিলা সংগ্রামীদের ধর্ষণ, কত ফাঁসি, দ্বীপান্তর, জেল, কত কিছুর বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হলেও সামগ্রিকভাবে সমগ্র দেশ আজ গভীর সংকটে আচ্ছন্ন। দারিদ্র, বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ সার্বিক সমস্যায় আমরা জর্জরিত। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা,
স্বাস্থ্যের অধিকার থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত। এছাড়া আজকের দিনে নারীর সম্মান ধুলােয় লুষ্ঠিত। নারীদেহের অশ্লীল বিজ্ঞাপন, পণপ্রথাকে কেন্দ্র করে বধূহত্যা, নারী নির্যাতন, কথায় কথায় তালাক, নারী পাচার, গণধর্ষণ, নারীর নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি সমস্যা ক্রমান্বয়ে সমাজে বেড়েই চলেছে। বর্তমানে মুর্শিদাবাদ জেলা নারী পাচারে শীর্ষস্থান আজ একথা ভেবেও লজ্জা পাই। তাই আজকের দিনেও প্রয়ােজন এমন মহীয়সী সংগ্রামী বহু নারী চরিত্রের যাঁরা সার্বিক সংকট প্রতিরােধে সমস্ত কায়েমী স্বার্থের নানাবিধ নিপীড়নের বিরুদ্ধে মােকাবিলা করবার জন্য প্রস্তুত। তেমন নারী আন্দোলন শুধু নয় সামাজিক সংস্কার মূলক ব্যাপক সাংস্কৃতিক আন্দোলন সৃষ্টিরও প্রয়ােজন। তবেই এই স্মৃতিচারনার সার্থকতা।

তথ্যসূত্রঃ-
১। মুর্শিদাবাদ অনুসন্ধান, প্রথম খন্ড, সম্পাদনা-অরিন্দম রায়।
২৷ স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী— কমলা দাশগুপ্ত
৩।স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে উপেক্ষিতা এক অনন্যা–মৃণালদেবী ও অচিন্ত্য সিংহ
(পত্রিকা— বহ্নিশিখা, সম্পাদক ও কবিতা সিংহ ২০০৪ জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়)
৪। Political Movement in Murshidabad 1920-1947: Bishan Kumar Gupta.
৫। জাতীয় সংগ্রামে ভারতীয় নারী ও ইপ্সিতা গুপ্ত (স্মরনিকা বহরমপুর পৌরসভা
১৩০ বর্ষপূর্তি)
৬। মুর্শিদাবাদ জেলা গেজেটিয়ারর্স
৭। মুর্শিদাবাদ জেলার রাজনৈতিক আন্দোলনের ধারা (১৯২৫-৭৫) বিপ্লবী অনন্ত ভট্টাচার্য্য
স্মারকগ্রন্থ।
৮।91 The Role of Krishnath College and Revolutionary Movement in
Murshidabad, 1903-1947– Dr. Md. Khairul Anam
৯। অগ্নিযুগে অসিলতা— রবীন বিশ্বাস (ঝড় সংবাদ সাহিত্য সাপ্তাহিক ১৭-২৩ আগষ্ট
২০০৯)
১০। আইনজীবী স্বাধীন সান্যালের সঙ্গে সাক্ষাৎকার (১৭ নভেম্বর ২০১০)
১১। বাসভূমি, তিরিশ বর্ষ সংখ্যা, ফেব্রুয়ারী, ২০০৯।