এক ঋষি ছিলেন। বিয়ে করলেন দুই বোনকে। পিতা প্রজাপতি দক্ষ’র দুই কন্যা দিতি ও অদিতি চরিত্রে ছিলেন একেবারে আলাদা। সেই কাশ্যপ ঋষির ঔরসে দুই বোনের গর্ভে সন্তান এলো। অদিতির গর্ভে জন্মানো সন্তানেরা হলেন দেবতা। আর দিতির গর্ভস্থ সন্তানের হলো ঠিক বিপরীত চরিত্রের দৈত্য। একই পিতার দুই দল সন্তানের কলহ, যুদ্ধ আর খুনখুনি সেই যে শুরু হলো, তার সমাধান আর হয়নি কোনদিন। এই লড়াইয়ে অপেক্ষাকৃত বলশালী দৈত্যদের হাতে পরাস্ত হতেন দেবতারা। দেবতাদের হাতেও মৃত্যু ঘটতো দৈত্যদের। তবে দেবতাদের মৃত্যুর খবর খুব একটা শোনা যায় না। দৈত্যদের একটি সুবিধা ছিল। তাদের গুরু শুক্রাচার্য মৃত সঞ্জীবনী মন্ত্রে বাঁচিয়ে তুলতে পারতেন মৃত দৈত্যদের। দেবতাদের গুরু বৃহস্পতির সেই ক্ষমতা ছিল না। বৃহস্পতির পুত্র কচ’কে শুক্রাচার্যের কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণের জন্য পাঠিয়ে মৃত সঞ্জীবনী মন্ত্র শেখার ‘কচ-দেবযানী’র অমর প্রেমের গল্প পরে কখনও বলবো।
যুদ্ধ, মারামারি, খুনোখুনিতে লিপ্ত দেবতা ও দৈত্যদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য একদিন ডেকে পাঠালেন স্বর্গের ‘পালনকর্তা’ বিষ্ণু। বোঝালেন কেবল ‘অমৃত’ই দিতে পারে এই কলহের মীমাংসা, সব অশান্তির সুরাহা, মৃত্যুহীন জীবন। তবে ঘটনার পেছনে পরোক্ষে যার বড় ভূমিকা ছিল, তিনি দুর্বাসা মুনি। হাতির পিঠে চেপে বনের মধ্যে দিয়ে দেবরাজ ইন্দ্রের যাওয়ার পথে দেখা হয়ে গেল দুর্বাসা মুনির সঙ্গে। মুনির হাতে তখন অপ্সরাদের দেওয়া সুরভিত পুষ্পমালা। প্রীত দুর্বাসা মুনি সেই মালা দিলেন দেবরাজকে। ইন্দ্র মালাটি পরিয়ে দিলেন ঐরাবতের শুঁড়ে। শুঁড় থেকে সেই মালা মাটিতে পড়ে লুটোপুটি খেতে থাকল। ক্রুদ্ধ দুর্বাসা অভিশাপ দিলেন বলহীন, বুদ্ধিহীন, শ্রীহীন হয়ে যাবে দেবতাকুল। ঋষিদের অভিশাপ কখনো বিফলে যায় না। এই সুযোগে দৈত্যরা আক্রমণ করলো এবং পরাস্ত করতে থাকলো স্বর্গের দেবতাদের।
এই কঠিন অবস্থায় দাঁড়িয়ে গভীর পরিকল্পনা করে দেবতা ও দৈত্যদের পরামর্শ দিলেন অনন্ত সজ্জায় শায়িত বিষ্ণুদেব। অমৃত সন্ধানের জন্য আয়োজন করতে হবে সমুদ্রমন্থনের। ‘সৃষ্টিকর্তা’ ব্রহ্মা ও ‘সংহারকর্তা’ মহাদেবের এতে পূর্ণ সম্মতি মিললো। দৈত্যরাও সম্মতি দিল আগ্রহের সঙ্গে। এরপর শুরু হলো সমুদ্রমন্থনের উদ্যোগ। ক্ষীরসাগরের বুকে মন্দার পর্বতকে করা হলো মন্থনদন্ড, মহাদেবের স্কন্ধসঙ্গী নাগরাজ বাসুকি হলেন মন্থনরজ্জু এবং ঘূর্ণনের সুবিধার জন্য নিজের পৃষ্ঠে মন্দার পর্বতকে ধারণ করলেন বিষ্ণু অবতার কূর্ম। দেবতাদের বুদ্ধি যেহেতু একটু বেশি, তাই কৌশলে নাগরাজ বাসুকির বিষ উদগীরণের মুখের দিকটা দৈত্যদের দিয়ে বরাবরের মতো দেবতারা রইলেন নিরাপদে, লেজের দিকে।
শুরু হলো সমুদ্র মন্থন। চলতে থাকল একশ বছরেও বেশী। কাঙ্খিত অমৃত কোনভাবেই ওঠে না। একে একে যা উঠলো তা দেবতা, অসুর ও মুনি-ঋষিদের মধ্যে ভাগ হয়ে গেলো। ঐরাবত পেলেন ইন্দ্র, উচ্চৈঃশ্রবা ঘোড়াটি নিলেন সূর্যদেব, কৌস্তুভ মণি ও পাঞ্চজন্য শঙ্খ হস্তগত হলো বিষ্ণুদেবের, কামধেনু পেলেন মুনি-ঋষিরা এবং বারুনীকে জোর করে নিয়ে নিলেন অসুরকুল। এরপর উঠলেন লক্ষ্মী। অপরূপা সুন্দরী, ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মীকে নিয়ে প্রথম বিবাদ শুরু হল দেবতা ও দৈত্যদের মধ্যে। বিষ্ণু সমাধান দিয়ে বললেন, স্বয়ংবরা হবেন লক্ষ্মী। যাকে পছন্দ তার গলাতেই মালা দেবেন। শেষ পর্যন্ত শ্রীবিষ্ণুরই লক্ষী লাভ হয়েছিল। সমুদ্র মন্থন থেকে এক সময় উঠলো মহাবিশ্ব ধ্বংসকারী গরল। এই সংকট মুহূর্তে এগিয়ে এলেন মহাদেব। কন্ঠে সেই গরল ধারণ করে হলেন নীলকন্ঠ।
অবশেষে অমৃত কলস বা কুম্ভ হাতে ক্ষীরসাগরের মন্থন থেকে উঠে এলেন ধন্বন্তরি। সেই কুম্ভ বা কলস থেকেই ‘কুম্ভ’ নামের মেলার উৎপত্তি বলে অনুমান। সবার অলক্ষ্যে সেই অমৃত কুম্ভ নিয়ে পালাতে লাগলেন দেবরাজ ইন্দ্রের পুত্র জয়ন্ত। সমুদ্র মন্থনের কাজে নিবেদিত দৈত্যরা বিষয়টি খেয়াল না করলেও, দৈত্যদের গুরু শুক্রাচার্য বিষয়টি লক্ষ্য করলেন। বললেন- ‘ওই দেখো, অমৃত-কুম্ভ নিয়ে পালাচ্ছে জয়ন্ত।’ ধাওয়া করলেন দৈত্যরা। অমৃত কুম্ভ হাতে ছুটছেন জয়ন্ত আর পেছনে দৈত্যদের দল। ছুটতে ছুটতে স্বাভাবিক কারণে হাঁপিয়ে উঠছিলেন। পরিশ্রান্ত জয়ন্ত এইভাবে মোট বারো বার অমৃত কুম্ভ মাটিতে বসিয়ে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। আট বার পৃথিবীর বাইরে এবং চারবার পৃথিবীতে। পৃথিবীর সেই চার জায়গা হল- শিপ্রা নদীর তীরে উজ্জয়িনী, গোদাবরি নদীর তীরে নাসিক, গঙ্গার উৎসমুখ হরিদ্বার এবং গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতী নদীর মিলনস্থল প্রয়াগ। এইসব জায়গায় কিছুটা চলকে পড়ে গেছিল কুম্ভের অমৃত, তাই এই চার জায়গা ‘অমৃত কুম্ভ’।
পৃথিবীর জুড়ে জয়ন্তর পেছনে দৈত্যদের এই ধাওয়া করার সময়কাল ছিল বারো দিন। দেবতাদের বারো দিন, মানুষের বারো বছর। তাই প্রতি বারো বছর অন্তর ঘুরেফিরে আসে পূর্ণকুম্ভ। পরপর বারো বার এই পূর্ণ কুম্ভের সমাপ্তি শেষে একশো চুয়াল্লিশ বছর অন্তর আসে মহাকুম্ভ, এবারে যা সংঘটিত হয়েছে উত্তরপ্রদেশে প্রয়াগরাজে। চন্দ্র, সূর্য, বৃহস্পতি ও শনি এই চার গ্রহ জয়ন্তর এই পলায়নে সাহায্য করেছিলেন, পাহারা দিয়েছিলেন অমৃত কুম্ভ। তাই জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী এঁদের অবস্থানের ভিত্তিতেই স্থির হয় ভারতবর্ষে চার স্থানে কুম্ভ মেলার নির্ঘণ্ট। সূর্য ও বৃহস্পতি যথাক্রমে মেষ ও কুম্ভ রাশিতে গেলে কুম্ভ হয় হরিদ্বারে। মকর ও বৃষ রাশিতে গেলে স্থান ঠিক হয় প্রয়াগে। মকর ও সিংহ রাশিতে গেলে নাসিকে। তুলা ও বৃশ্চিক রাশিতে গেলে উজ্জ্বয়িনী কুম্ভ মেলার স্থান। প্রয়াগরাজ ও হরিদ্বারের উৎসবের পার্থক্য ছয় বছর এবং এই দুটি স্থানে পূর্ণকুম্ভ ও অর্ধকুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রয়াগে তীর্থ স্নানের কথা পাওয়া যায় ‘ঋকবেদ’-এ। বৌদ্ধ ধর্ম শাস্ত্রে প্রয়াগ স্নানের কথা স্বয়ং বুদ্ধ বলেছেন। মহাভারতে ‘অতীতের ভুল ও প্রায়শ্চিত্তের জন্য’ প্রয়াগ স্নানের বিষয়ের অবতারণা হয়েছে। কুম্ভ মেলার বয়স নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন মত থাকলেও খ্রিষ্টিয় সপ্তম শতাব্দীতে চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-এর বর্ণনায় বৃহৎ সমাবেশের মধ্য দিয়ে কুম্ভ মেলার উল্লেখ পাওয়া গেছে; সময় কাল মোটামুটি ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ। মেগাস্থিনিসের লেখাতেও হিন্দু সমাবেশ ও তীর্থ স্নানের উল্লেখ পাওয়া যায়। খ্রিষ্টিয় অষ্টম শতাব্দীতে কুম্ভ মেলাকে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ও সংগঠিত রূপদান করেন হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান সংস্কারক আদি শংকরাচার্য। তিনি সারা ভারত জুড়ে বিভিন্ন মঠ ব্যবস্থার জাগরণ, ধর্মীয় সমাবেশ ও দার্শনিক আলোচনার কেন্দ্রস্থল করেছিলেন কুম্ভ মেলাকে। মহানির্বাণী, অটল, নিরঞ্জনী, আনন্দ, জুনা, আবাহন এবং অগ্নি’র মতো সাতটি ‘শৈব আখড়া’ এবং নির্বাণী, দিগম্বর এবং নির্মোহী’র মতো তিনটি ‘বৈষ্ণব আখড়া’ সমন্বয় ঘটেছিল তাঁরই হাত ধরে এই কুম্ভ মেলাতে। ১৬শ শতাব্দীতে তুলসিদাসের ‘রামচরিত মানস’-এ প্রয়াগে বার্ষিক মেলার যেমন উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখা যায়, তেমনি মুসলিম রাজার ‘আইন-ই-আকবরী’তে কুম্ভকে হিন্দুদের ‘তীর্থস্থানের রাজা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ষোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকে লেখা ‘তাবাকাত-ই-আকবরী’তে প্রয়াগ সঙ্গমের স্নানের দৃশ্যের বর্ননা আছে।
কয়েক হাজার বছর ধরে চলে আসা ভারতের এই পরম্পরা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে বিধর্মীরা। মুছে দিতে চেয়েছে তার আধ্যাত্মিক ও সংস্কৃতিগত উজ্জ্বল দিকগুলো। ১৩৯৯ সালে তৈমুরের সেনাবাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল হরিদ্বারের কুম্ভ মেলা। তাঁর জীবনীকার শরফ আদ-দিন আলী ইয়াজদির মতে, তৈমুরের সেনাবাহিনী হরিদ্বার লুণ্ঠন করেন এবং সমবেত তীর্থযাত্রীদের হত্যা করেন। ১৮৮৫ সালে খ্রিস্টানদের সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রয়াগ কুম্ভ মেলার ম্যানেজারের দায়িত্ব দেয় হোসেন নামের এক মুসলমানকে। মদ ও গরুর মাংস সহযোগে ইউরোপীয় ভদ্রলোকেদের নৌকা বিহারে আধ্যাত্মিক হিন্দুদের স্নান দৃশ্য নিয়ে বিকৃত উল্লাসের বর্ণনা লিপিবদ্ধও করে। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় ইতিহাসে ‘এলাহাবাদ কুখ্যাত নৃশংস শান্তি’ নামে পরিচিত প্রয়াগে কুম্ভ মেলার স্থানকে ধ্বংস করে দেওয়া উল্লেখ আছে। সেই কুম্ভেই ইংরেজ প্রশাসক নিলের নেতৃত্বে তীর্থযাত্রীদের খ্রিষ্টান ধর্মে রূপান্তরিত করার অপচেষ্টার সাক্ষীও থেকেছে এই দেশ।
কুম্ভ ভারতআত্মা ও ভারত সংস্কৃতির এক পূর্ণরূপ। আদি শংকরাচার্য চেয়েছিলেন, ভারতবর্ষের ভাব আর ভাবনার মিলন স্থল, হিন্দুের ঐক্য ও সমন্বয়ের পূণ্যভূমি হয়ে উঠুক এই কুম্ভ মেলা। অনন্তকাল ধরে যে মুনি-ঋষি, বিভিন্ন আখড়ার সাধুসন্ত, নাগা সাধু, ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক প্রানকে বুকে করে যাপন করেছেন এবং তাঁরাই প্রয়োজনে অস্ত্র ধরেছেন হিন্দুত্বকে রক্ষা করতে। মুসলমানদের আক্রমণে হিন্দু বিপন্নতার কালে ১৭৬৬ সালে হরিদ্বারে, ১৭৪৫ সালে প্রয়াগে মুসলমানদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন হাজারো হাজারো সন্ন্যাসী। প্রবহমান রেখেছেন সনাতন ধারাকে, রক্ষা করেছেন হিন্দুত্বকে। মদনমোহন মালব্যর নেতৃত্বে ১৯০৬ সালে প্রয়াগ কুম্ভ মেলাতেই ‘সনাতন ধর্ম সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। বারংবার হিন্দুদের সংঘবদ্ধতার উজ্জ্বল উদাহরণ এবং হিন্দু আন্দোলনের তীর্থস্থান হয়ে থেকেছে এই কুম্ভমেলা। ১৯৬৪ সালে ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’-এর প্রতিষ্ঠাও হরিদ্বার কুম্ভমেলায়।
এই-যে কোটি কোটি মানুষের সমাবেশ। তীব্র শীত উপেক্ষা করে, সমস্ত প্রতিকূলতাকে দু-পায়ে মাড়িয়ে, মাইল মাইল পথ হেঁটে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত জাগার কুম্ভ মেলা, হয়তো জন্মান্তরের পাপ থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। হয়তোবা প্রতিদিনের জীবন সংগ্রাম আর সংসার যুদ্ধের যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে একটুকু ‘অমৃত’র সন্ধান। আমিও হিন্দু ধর্মের জন্মান্তরে বিশ্বাস করি, পূণ্যের লোভ আমারও যে আছে লুকাই কি করে! তবে প্রয়াগের সীমাহীন বিস্তৃতি নিয়ে জেগে থাকা এই আয়োজনে বেশি করে খুঁজেছি, বুঝেছি এবং অনুভব করেছি মানুষকে। কেবলই মানুষ। কোটি কোটি মানুষের আবেগ, উচ্ছ্বাস, ভক্তি, প্রেম, আত্ম-নিবেদনের প্রয়াগের জনসমুদ্রে অবগাহন করতে পারার প্রাপ্তি আমার আজীবনের সঞ্চয়। দেখেছি এক হয়ে গেছে মুচি, মেথর, ব্রাহ্মণ, উঁচু-নিচু, বাঙালি, গুজরাটি, অসমীয়া। একই পবিত্র ধারায় সব ভেদাভেদ মুছে ফেলে নিজেদের ধুয়ে ধুয়ে নেওয়ার আত্মপ্রাপ্তির এই আনন্দ উৎসব পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
সাম্প্রতিক বাংলা থেকেই ‘মহাকুম্ভ’ ও ‘মৃত্যুকুম্ভ’র বিতর্ক বড় ব্যথিত করে হৃদয়কে। সবকিছুকে রাজনীতিকরনের এই হীনমন্যতা, ইতিহাস বিমুখ বাঙালিকে আরও একবার লজ্জিত করে, কুঞ্চিত করে সারা বিশ্বের কাছে। পাল ও সেন যুগে মুসলিম আক্রমণ কারণে বাংলা ত্রিবেণী সঙ্গমের বৃহৎ কুম্ভ মেলা ১৩১৯ সালের পর প্রায় ৭০০ বছর বন্ধ থেকেছে। বেহুলা-লখিন্দর খ্যাত হুগলি জেলার ত্রিবেণী যেখানে গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর মিলন হয়েছে সেখানেই একদিন বিখ্যাত সাধু-সন্তরা পুণ্য স্নানে এসেছিলেন। গঙ্গাসাগর যেমন কপিল মুনির তপস্যাস্থল, তেমনি এই ত্রিবেনীর সপ্তর্ষি ঘাটে তপস্যা করে গেছেন পুলহ, পুলস্থ, অত্রি, বশিষ্ঠ ও বিশ্বামিত্রের মত ঋষিরা। তপস্যা করেছেন বাবা লোকনাথের গুরুভাই বেণীমাধবের মতো বিশিষ্ট মনিষী। বারে বার এই স্থান ধ্বংস করেছে বখতিয়ার খলজি। আলাউদ্দিন খলজির সেনাপতি জাফর খাঁ গাজী ত্রিবেণী ঘাটের বিষ্ণু ও সরস্বতী মন্দির ধ্বংস করে তাকে ‘গাজীর দরগা’য় পরিণত করেছে। বন্ধ করে দিয়েছিল এই ত্রিবেণী সঙ্গমের পুণ্য স্নান। পুনরায় যা চালু করতে ৭০০ বছর লেগে গেল বাঙালির। তাই আজকের ‘মৃত্যুকুম্ভ’ প্রবক্তাদের শিরায় জাফর খাঁ গাজীদের রক্ত বইছে কিনা খোঁজ নেওয়াটা জরুরী। সারা পৃথিবীর ইতিহাস দেখিয়েছে, মুসলিম শাসকদের সাম্রাজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যম্ভাবীরূপে ইসলামি আগ্রাসন। ধ্বংস করে দিয়েছে স্থানীয় চিরাচরিত সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও পরম্পরা। কায়েম হয়েছে অপ্রতিরোধ্য ইসলামিক আধিপত্য। ভারত এখনও সারা বিশ্বের কাছে এক উজ্জ্বল উদাহরণ, যে ইসলামের এই আগ্রাসনকে পুরোপুরি কার্যকর হতে দেয়নি। ‘মৃত্যুকুম্ভ’র বক্তারা সেই ইসলামিক লক্ষ্য পূরনের ঘুঁটির চাল কিনা সে প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে প্রতিদিন।
(The views expressed are the author's own and do not necessarily reflect the position of the organisation)