Dr. Syama Prasad Mookerjee Research Foundation

বিজ্ঞানসাধক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় – হিন্দু জাতিভেদ ও ইসলাম আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক উজ্জ্বল মুখ

নবজাগরণের সময়কালের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া বাংলার চিন্তার জগতে সারা বিশ্বকে পথ দেখানো এক আলোকিত মানুষ তিনি। ইতিহাস চেতনায়, দেশপ্রেমের স্পর্ধিত গানে, সমাজ সংস্কারে, বিজ্ঞানসম্মত-যুক্তিবাদী চিন্তার প্রসারে, শিক্ষাকে কর্মের মধ্যে স্বার্থকতা খুঁজে দেওয়ার অনন্য মানুষ তিনি। সারাজীবন পেটের রোগে ভোগা, শীর্ণকায়,  কার্লাইল-হাবার্ট স্পেনসারের মতো অনিদ্রায় রোগী, বিজ্ঞান গবেষণায় ইতিহাস তৈরী করা তিনি আপাদমস্তক বাঙালী মানুষ। তিনি রবি ঠাকুরের শ্রদ্ধার সম্ভাষণে ‘আচার্য’, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। জন্ম ২রা আগস্ট, ১৮৬১।

তাঁর পরিচয় কেবল ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস’এর মাধ্যমে পরাধীন ভারতবর্ষে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে জাতিকে উঠে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা, বিজ্ঞান ক্ষেত্রে ‘ভারতীয় রসায়ন গবেষণা’ প্রতিষ্ঠা, ‘ভারতীয় রাসায়নিক শিল্প’ প্রতিষ্ঠা কিংবা ‘মারকিউরিক নাইট্রেট’ আবিষ্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর জীবনের লক্ষ্য ছিল প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান চর্চার স্বর্ণালী সময়ের বিশ্লেষণ,  তার ঐতিহ্যের চর্চা ও বিস্তৃত পরম্পরা উদযাপনের মধ্য দিয়ে পরাধীন ভারতবাসীর জাতীয়তাবোধকে জাগ্রত করা। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘এ হিস্ট্রি অফ হিন্দু কেমিস্ট্রি’তে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানচর্চা-রসায়নচর্চা-চিকিৎসা বিজ্ঞান ইউরোপের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল। ভারতবর্ষের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, তার অর্জিত জ্ঞান ভান্ডার  আরব দেশের মধ্য দিয়েই পাশ্চাত্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান চর্চার বিস্তৃতি এবং গভীরতা মিশর, চিন প্রভৃতি দেশের তুলনায় অনেক প্রাচীন ও উন্নত। তাঁর এই গ্রন্থে তিনি বৈদিক যুগ (খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছর) থেকে ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতবর্ষের রসায়ন চর্চাকে চারটি ধাপে ভাগ করেছেন এবং ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়েছেন ‘রসায়ন’ কথাটিও প্রাচীন ভারতেই উদ্ভূত। ‘রসায়ন’-এর ‘রস’ বলতে চরক এবং সুশ্রুতের মতে ‘ঘন ক্কাথ’। চরক ও সুশ্রুত দুজনেই বৈদিক যুগের চিকিৎসাশাস্ত্রের মহান ব্যক্তিত্ব। আচার্য তাঁর রচনায় ও গবেষণায় ‘চরক সংহিতা’ ও ‘সুশ্রুত সংহিতা’কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছেন। গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করেছেন বাগভট রচিত প্রাচীন ভারতের চিকিৎসাশাস্ত্র ‘অষ্টাঙ্গহৃদয়’, মাধবকরের আয়ুর্বেদশাস্ত্র ‘নিদান’, রসায়নবিদ নাগার্জুনের ‘রসরত্নাকর’ প্রভৃতির কথা।

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ  অধ্যায়  সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে হিন্দু ধর্মের জাতিভেদ প্রথা এবং ইসলামের ধর্মীয় আগ্রাসনের কারন বিশ্লেষণ এবং সমাধানের আপ্রাণ চেষ্টা। ১৯২৫ সালে ফরিদপুরের প্রাদেশিক হিন্দু মহাসভার সম্মেলনে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় সভাপতির বক্তব্যে সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেছিলেন বাংলায় মুসলমান সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। যুক্তি দিয়ে স্পষ্ট করেছিলেন হিন্দুদের মধ্যে অনৈক্য, জাতিভেদ, কুসংস্কার, অস্পৃশ্যতা কেবল জাতির মেরুদন্ডকে দুর্বল করেনি বরং মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধিতে নিরন্তর ইন্ধন জুগিয়েছে। সেদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন মহাত্মা গান্ধী, যিনি কংগ্রেসের উচ্চবর্ণের রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বেরিয়ে সমাজের পিছিয়ে-পড়া এক বৃহৎ হিন্দু সমাজকে সামাজিক স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, শুরু করেছিলেন ‘হরিজন আন্দোলন’। প্রফুল্লচন্দ্র উল্লেখ করেছিলেন বিধবা বিবাহের প্রবক্তা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বিধবা বিবাহ’র উপসংহারের কথা; “আমি জানি অনেক হিন্দু বিধবা এই প্রকার কলঙ্কময় জীবন আপন করা অপেক্ষা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিয়া উদ্বাহ-সূত্রে আবদ্ধ হওয়া শ্রেয় জ্ঞান করে।” আচার্য বিধবা বিবাহের ঘোরতর সমর্থক ছিলেন। তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে বুঝিয়েছিলেন সেকালে হিন্দু ধর্মে বিবাহ ব্যবস্থায় ত্রুটির ফলে বিপুল সংখ্যায় কম বয়সে মেয়েদের  বিধবা হওয়া প্রায় বাধ্যতামূলক ছিল, সেইসব কম বয়সী বিধবাদের পুনরায় বিবাহ না হলে হিন্দুদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে; অথচ মুসলমান ধর্মে এর ঠিক বিপরীত ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন অস্পৃশ্যতা, ছোঁয়াছুয়ি, উঁচু-নিচু ভেদে জর্জরিত অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষ যে-দিন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নেন, সেদিন থেকে তাদের মধ্যে সমস্ত ভেদাভেদ মুছে যায়। তারা একই আসনে বসে খেতে পারেন, ছোঁয়াছুঁইর কোন বাধ্যবাধকতা থাকেনা, একই উপাসনালয় মসজিদে একসঙ্গে ভক্তি প্রদর্শনের অধিকার জন্মায়। তাই জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতাকে হিন্দু ধর্ম থেকে আগে বিতাড়িত করা প্রয়োজন।

তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে এক নিদারুন ক্ষতের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, হিন্দু ধর্মের সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে উন্মুক্ত বিবাহ ব্যবস্থা প্রচলিত না হলে- জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিচারে, সম্প্রদায়গত সম্পর্ক নির্মাণের নিরিখে এবং একতাবদ্ধভাবে ইসলামিক আগ্রাসন প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে হিন্দুরা পিছিয়ে পড়বে। বিস্তৃত ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন, বেদের সংকলিতা ও মহাভারতের রচয়িতা মহামুনি ব্যাসদেব মৎস্যগন্ধার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেও তিনি মহর্ষি বশিষ্ঠ। পুরাণের নারদ দাসী বা বেশ্যাপুত্র। তবু তিনি দেবর্ষি, স্বর্গের দেবতাদের অন্যতম পরামর্শদাতা, ব্রহ্মার মানসপুত্র। সীতা-সাবিত্রী সনাতন হিন্দু ধর্মের নারী জাতির আদর্শ, এর দ্বারা প্রমাণ হয় হিন্দু ধর্ম কত উদার ছিল একদিন।

হিন্দু মহাসভার সেদিনের সভাপতি আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় পরিসংখ্যান ও ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়েছেন ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলায় হিন্দুর সংখ্যা মুসলমান অপেক্ষা প্রায় চার লক্ষ বেশি  ছিল। অথচ ঠিক ৫০ বছর পর ১৯২১ সালের আদমশুমারি অনুসারে বাংলায় হিন্দু ৪৩.৭২ শতাংশ হয়ে গেল এবং মুসলমান বেড়ে দাঁড়ালো ৫৩.৭৫ শতাংশে। প্রখ্যাত জাতীয়তাবাদী নেতা ডাঃ উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের ১৯০৯ সালে প্রকাশিত ‘Hindus – A Dying Race’ গ্রন্থের কথা উল্লেখ করে তিনি প্রতি ১০ বছর অন্তর মুসলমান সংখ্যা বৃদ্ধির ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে সেই ১৯২৫ সালেই নতুন দিক নির্দেশ করেছিলেন। সেদিনের ভাষণে তিনি দেখিয়েছেন বাংলায় ১৯৮১ সালে হিন্দু ছিল ৪৮.৮২ শতাংশ ও মুসলমান ৪৯.৬৯ শতাংশ, ১৮৯১ সালে ৪৭.৬৭ হিন্দু ও ৫০.৬৮ শতাংশ মুসলমান, ১৯০১ সালে হিন্দু আরও কমে হলো ৪৭ শতাংশ ও আর মুসলমান বেড়ে হয়ে গেল ৫১.১৯ শতাংশ।  ১৯২১ সালে জনসংখ্যা বিন্যাসে ৪৩.৭২ শতাংশ হিন্দু ও ৫৩.৭৫ শতাংশ মুসলমান মোট ১০ শতাংশের পার্থক্য তখনকার ২ কোটি জনসংখ্যার এই বাংলায়। তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেছেন – কলেরা, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর প্রভৃতি হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়কে সমানভাবে আক্রান্ত করলেও কেন দিনে দিনে হিন্দুর সংখ্যা কমছে আর মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে!

১৯৩১ সালের ‘গোল টেবিল বৈঠক’ এবং ১৯৩২ সালের বিখ্যাত ‘পুনা চুক্তি’র মাধ্যমে রামসে ম্যাকডোনাল্টের নেতৃত্বে ইংরেজ দুটি কাজ করল- প্রথমত, মুসলমানদের জন্য আলাদা সংরক্ষণ এবং দ্বিতীয়ত, হিন্দু সম্প্রদায়ের নিম্ন শ্রেণীর ও পিছিয়ে পড়া বর্গের প্রতিনিধিত্বের আলাদা সংরক্ষণের ব্যবস্থা। তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী, বসেছিলেন অনশনে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দুদের ভেতরে এই বিভেদ ও বিভাজনে আতঙ্কিত হয়ে চিঠি লিখেছিলেন গান্ধীকে। কিন্তু ড. বি আর আম্বেদকরের নেতৃত্বে পিছিয়ে পড়া বর্গের সংরক্ষণের মাধ্যমে হিন্দু সমাজের  বিভাজন আটকানো যায়নি সোদিন। কেন্দ্রীয় পরিষদ ও রাজ্য পরিষদে  জন প্রতিনিধিত্বে ভারসাম্য আনার জন্য মুসলিম লীগ আলাদা করে মুসলিম সংখ্যালঘু প্রদেশগুলিতে সংরক্ষণ নিশ্চিত করলো,  সেই সঙ্গে বাংলা ও পাঞ্জাবের মত মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশেও মুসলমানদের নির্দিষ্ট সংরক্ষণ দাবী করে বসলো। এর বিরুদ্ধেও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। স্মরণ করা দরকার মহাত্মা গান্ধীর দর্শন ও কাজের তুমুল সমর্থ্যক হলেও হিন্দু স্বার্থ বিঘ্নিত করা ১৯২১ এর ‘খিলাফত আন্দোলন’এর তীব্র বিরোধী ছিলেন তিনি।

১৯৩৭ সালে নির্বাচনের ঠিক আগে বাংলার জন্য বিশাল সংখ্যক আসন সংরক্ষণের দাবি পত্র পেশ করে মুসলিম লীগ। তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়লেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। সেদিন তাঁর এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রামানন্দ চ্যাটার্জী, ডাক্তার নীলরতন সরকার, স্যার ব্রজেন্দ্রনাথ শীল এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমূখ। ১৯৩৭ এর নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে মুসলিম লীগ ও ফজলুল হক মন্ত্রিসভা হিন্দুদের প্রতি চরম বিদ্বেষমূলক কতগুলি আইন পাশের ঘোষণা করেছিল।  যাদের মধ্যে অন্যতম ‘ক্যালকাটা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট’, মাধ্যমিক শিক্ষা ক্রম থেকে সংস্কৃত ভাষার ও বাংলা ভাষার প্রভাব খর্ব করে উর্দু বাধ্যতামূলক করা ‘বেঙ্গল সেকেন্ডারি এডুকেশন বিল’ প্রভৃতি। এর বিরুদ্ধে তীব্র  আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী।  হিন্দু স্বার্থ বিরোধী মুসলিম লীগের অনৈতিক এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় শুধু মৌখিক বিবৃতিই দেননি, পথে নেমে আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন।  সেদিন তাঁকে সমর্থন করতে এগিয়ে এসেছিলেন ডাক্তার নীলরতন সরকার, আচার্য স্যার যদুনাথ সরকার, বিজ্ঞানী ডঃ মেঘনাদ সাহা, শিক্ষাবিদ ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ,  স্যার মন্মথনাথ  মুখোপাধ্যায়, ভাষাবিদ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় সহ অসংখ্য দিকপাল মানুষ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শারীরিক অসুস্থতার কারণে উপস্থিত থাকতে না পারলেও লিখিত প্রতিবাদ পত্র পাঠিয়েছিলেন সেই প্রতিবাদ সভায়।

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র বিজ্ঞান চর্চার  রসায়নাগারের বাইরে,  বাণিজ্য চর্চার ‘বেঙ্গল কেমিক্যালস’ এর বাইরে, ইতিহাস ও সাহিত্যচর্চা ‘আত্মচরিত’এর বাইরে ভারতবর্ষের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও পরম্পরা নিয়ে সমান সচেতন ছিলেন। জ্ঞান ও মেধা দিয়ে বুঝেছিলেন ইসলাম আগ্রাসন ও মুসলিম সংখ্যা বৃদ্ধি বাংলার অন্ধকার ভবিষ্যতের দিক নির্দেশ করছে। তিনি অন্তর দিয়ে অনুভব করেছিলেন ইসলামের আগ্রাসন যে-কোন দেশের সুস্থ জীবনচর্চায় অন্তরায় এবং সবকিছুকে ধর্মের মোড়কে গুলিয়ে দেওয়ার এক ভয়ংকর প্রবণতা সেই ধর্মের প্রচলিত ধারণার মধ্যে আছে। তাঁর কথারই প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় আজকের একটি পরিসংখ্যানে; ১৯৪৬ সালে সারা পৃথিবীতে  ইসলাম রাষ্ট্রের সংখ্যা যেখানে ছিল ৬টি, আজ ২০২৪ এ তা হয়ে দাঁড়িয়েছে  ৫৬।

বাংলার মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে তিনি শঙ্কিত হয়েছিলেন ১৯২৫ সালের ফরিদপুরের হিন্দু মহাসভার প্রকাশ্য সভায়। দেখিয়েছিলেন ১৮৭১ সালে বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু কি করে মাত্র ৫০ বছর পরে সংখ্যালঘিষ্ঠ জনসংখ্যায় পৌঁছে গেছিল। আজকের পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৪৬ সালে পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের জনসংখ্যা ছিল ২৯ শতাংশ, কমতে কমতে ২০২১-এ এসে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮ শতাংশে। অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গে ১৯৫১ সালের ১৯ শতাংশ মুসলিম বাড়তে  বাড়তে আজকে ৩২ শতাংশ পৌঁছেছে।  তবু মেকি ধর্মনিরপেক্ষতার নামে পশ্চিমবঙ্গে  মুসলমানদের এই  আগ্রাসন থেকে চোখ ফিরিয়ে আছেন অনেকে, অনেকে আবার সরাসরি নির্লজ্জ সমর্থন করছেন কেবল রাজনৈতিক লাভের আশায়। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের ঠিক ১০০ বছর আগে সেই ভবিষ্যৎ বাণী আজ অন্তিম সাবধান বাণী হয়ে বাজুক প্রতিটি পশ্চিমবঙ্গবাসির বুকে – “এখনো যদি আমাদের মোহনিদ্রা না ভাঙ্গে তাহইলে ২০০-২৫০ বছরের মধ্যে হিন্দু জাতি ধরাপৃষ্ঠ থেকে বিলুপ্ত হইবে।”

 

২রা আগস্ট, ২০০২৪

তথ্য ঋণ

১. আত্মচরিত – প্রফুল্ল চন্দ্র রায়

২. আচার্য বাণী – প্রসন্ন কুমার রায় সংকলিত

৩. আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় – সুধাংশু পাত্র

৪. স্বস্তিকা – আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় জন্ম সার্ধশতবর্ষ সংখ্যা, ২রা আগষ্ট, ২০১০

৫. Google

Author